ভাষা প্রাণের ঝংকার
আদিমতার কোনো উৎস ছিল না
আদম আ. এর মাটি থেকে সৃষ্টির মধ্যেই লুকিয়ে ছিল
আজকের কাল পর্যন্ত এসে পৌঁছানো সময়ের চলমান সেতু
পরিচ্ছন্ন জীবনবোধের রুচি আর উদ্যানময় পুষ্পধারার আহার
মা হাওয়ার কথোপকথনে গুঞ্জরিত সৌরভ ছড়াতো বেহেস্তের বাগান
রহস্যময় পৃথিবীতে মানুষের পদার্পণে দুলে উঠেছিল পৃথিবী অদ্ভুত ভঙ্গিমায়
অচলায়তন ভেঙে সজীব পুষ্পে ভরানো প্রকৃতি বিদীর্ণ করে
মানুষ সভ্য হয়েছে সেই সৃষ্টি রূহের ভিতর থেকে বেড়ে উঠে
যার কোনো উলঙ্গপনা ছিল না।
তখন থেকেই মানুষ শব্দের বুননে বাতাসের পাকে ছড়িয়েছে
মনের সুপ্ত বাসনা আর তার অংশ এসে পৃথিবীতে উপচে পড়েছে
জ্বালে উৎকর্ণ হাড়ির ভাতের মতো আনন্দভরা ফুটন্ত শব্দের রেকাবি নিয়ে
সেই থেকে আদমের ধারা ভাষার লাবণ্য নিয়ে আজকালতক
নিজের জৌলুসের ঢেকুর তৃপ্তির সাথে শুনিয়ে যাচ্ছে
অলংকার আর উপমা মিশিয়ে অহংকারের সাথে
যদিও কলুষিত হচ্ছে বিবেকের ঘরবাড়ি দুর্গন্ধময় যত মন্দ দিয়ে
তবু বলতে হয় মানুষ আজ সভ্য হয়েছে ভাষাকে লালন করেই।
লৌহে মাহফুজে যে ভাষায় সংরক্ষিত পবিত্র কোরআন
সে তো সুষ্পষ্ট সৌন্দর্যময় ভাষার লালিত্য নিয়ে অন্তর থেকে অন্তরময় হয়ে
বিকশিত করে যাচ্ছে সময়ের প্রতিটি পরমাণু
নরনারীর সৃষ্টির আগেই জীবনফুৎকারের জন্য জড়িয়ে নিয়েছিল
অবলিলায় প্রকাশের সৌন্দর্যকে মখমল বুকের ভিতর
খুলে দেখ সে কালাম কীভাবে ধাপে ধাপে বলে যায় মনের অভিব্যক্তি।
উদয়গিরি শপথের কন্যারা শব্দকে ভাববিনিময়ের মেকাপে জড়িয়ে
তুলে এনেছে জাতি বর্ণ ধর্ম নির্বিশেষে একেক প্রকাশের আধার
নিজের আস্তিনে লুকানো কামনা বাসনার পোশাকে ঢেকে আজ দূরবর্তী
চাঁদের শরীরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে
সংগীতের দুহিতা হয়ে মেলে ধরার প্রাণান্ত চেষ্টার সাথে জড়িয়েছে নিজেকে
লজ্জাবনত দৃষ্টিতে বাকি গ্রহগুলোর চোখের ভাষার আকুতি নিয়ে
পৃথিবীর দিকে তাদের চাওয়াপাওয়াকে বুঝিয়ে যাচ্ছে
আমরা আছি মহাকাশব্যাপী তোমাদের উর্ধমুখী চিন্তার বোধগুলোর সাথে।
যে পদক্ষেপ মেলে ধরে মানুষের মূল সূত্রগুলো
কীভাবে কোথায় তোমার নিঃশ্বাস বিছিয়ে তুলে নেবে ভোরের শরীর
তারও একটি ভাষা আছে – ভাষা প্রাণের ঝংকার মুঠো ধরা রোদ
চেতনার গহিন গহবরে পদ্মফুলের মুকুলের মতো ডানা তুলে দিয়ে
লুকানো অক্ষরগুলো দৃপ্ত তেজে কিসের বর্ণনা করে
জানে বায়ু তরঙ্গের প্রবহমান বিকশিত অস্তিত্ব।
ফুটফুটে যে শিশুটি শাহাদাত আঙুল তুলে নেড়ে নেড়ে চোখ দিয়ে কথা বলে
সে শিশুর অন্তরের ভাষা লেখা হয় চোখের বারান্দায়
আমরা যদি ভাষাজ্ঞানে পারঙ্গমতা প্রকাশ করতে পারি তাহলে
তার চোখের ভাষার পারঙ্গমতাকে নিঃসন্দেহে উত্তীর্ণ ভাষার নম্বরে বিজয় চিহ্ন
এঁকে দিয়ে প্রশংসার স্তুতিতে আলোকিত করতে পারি।
প্রতিটি প্রাণীই নিজস্ব বোধের শব্দ দিয়ে গড়ে তোলে বেড়ে ওঠার কাহিনী
সোলায়মান আ. নবীর মতোন অন্তরজ্ঞানী জন বুঝতেন ছোট্ট পিঁপড়ার কথা
তিনি তাদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন প্রাণীকূলের সুরম্য প্রাসাদ
তার দেয়ালের চোখ ছিল, মনের আকুতিগুলো লিপিবদ্ধ হতো সময়ের খাতায়
জিনেদের কথাগুলো শব্দে জড়ো করে নুয়ে এস ভেসে বেড়াতো চারপাশে
সে সব বাতাসের দেহ ভেদ করে উদগিরিত হতো ঝংকারের প্রবাহে।
ভাষা হৃদয়ের বাগানে ঘুরে ফিরে ঘ্রাণ ছড়ায়
পলকে নিঃশ্বাসে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর আত্মার ভিতর থেকে সেই শুরু থেকে।
২১.০২.২০২৪