আগন্তুক
বিকেল ঝরে পড়ে সন্ধ্যার কোলে
টুপটাপ সান্দ্র পুনরাবৃত্তে
শূন্যতার ভাঁজ ভেঙে অকরুণ বাতাসে
আঁধার ঘনিষ্ঠ দিনের অন্তিমে
স্থির আকাশ জানালায় একরাশ মেঘ ছায়ার সংঘাতে ভ্রমনরত
যেন কোন জলধারা গড়িয়ে পড়ছে বিরামস্তম্ভিত
কিছু ক্লেদ, কিছু পরিতোষ এক রেখায় যেন অশ্বের মত
বারংবার ছুটে চলেছে এদিক-সেদিক l
রোমে রোমে গলে পড়ে ঘোরলাগা চোখের চাকচিক্য
দুলে ওঠে নামহীন উপমার মাকড়
আভাস-লাগা কবিতার চিত্তে
অচেতন অক্ষরের মত তোমাকে করেছি পাঠ
হন্যে হয়ে খুঁজেছো তুমি চন্দ্রালোক
দিগন্তলীন একটি পাখি, যুগপৎ পলক না-পড়া মুখ l
মোমের আলোয় খসে পড়ে ছিন্ন-অঙ্গ অদৃশ্য নদীর
সাদা কাগজের পৃষ্ঠায় আদ্রতা আশ্লেষে কাঁপে
আমার হৃদস্পন্দনে তখনও ম্লান দুরত্বের মনস্তাপ
অন্তরাল ঊণতায় বেজে চলে সুবাসের মত
যেন স্রোতস্বিনী কন্ঠরোধ স্তুপ আহ্লাদ
ঝিম মেরে বসে থাকে অনুভবের ভেতর l
অনুপ্রাণিত প্রেমিকা
আমার অন্যমনস্ক পা থেমে থেমে চলে
মেঘহীন আকাশসড়কের দিকে l
দু’ধারে দুলছে প্রবোধ ভালোবাসা, ঈর্ষার ফণা, বিজ্ঞ শত্রু
এবং কয়েকটি প্রফুল্ল ফুলগাছ l
পাতাসর্বস্ব বৃক্ষগুলোর একটু একটু করে লালহলদে রঙ বদলানো নিষ্প্রভ হাসি যেন হীরে-সোনা
সকালের গ্রীবায় সবুজ আগ্নেয়াস্ত্র l
কোথাও কোথাও দ্বিধা বাল্যখেলা ভুলে স্থির ঠোঁটে সুদূর গুল্মে শোকাকূল l
স্বপ্ন ভেঙে বাস্তবের বায়ুমন্ত্রে রুগ্ন পদতল মিথ হয়ে জ্বলে চোখের কোমলে
এ দূরহকাল, গুহামানবের সঙ্গে বসবাস নিয়তির অক্টোপাস
প্রতিদিনের আবেগশূন্য কর্তব্যপ্রিয়তা আমাকে একটু একটু করে স্বীয়যাপনের কোরাস শেখায় l
এইসব মওসুমী দিনের গান একদিন পতিত গলিতদের দখলে অমরতা হারাবে l
আমি ক্রমাগত আন্তরিক হবো আততায়ী সভ্যতা আর অধরা সুন্দরের বিরোধে l
বিত্তহীন নিত্যদিন
আকাশের বুকে নীল সাগরের দেনা ছিল
এক লহমার শপথ ছিল চোখের কোলে l
আমি বিত্ত ফেলে চিত্ত খুঁজি
গাছের পাতা সবুজ বুঝি
একটুকরো সবুজ কোথায় পাই?
রাতের দেখা রঙে রঙে ক্লিষ্ট আঁধার
ছায়ায় মায়ায় সব যে ঢলো সন্ধ্যা কার?
এলোমেলো তীব্র বাতাস নগরঘড়ি
ক্রোধ ও প্রেমের মন্দ-সন্ত জড়াজড়ি
দৃষ্টির ব্যগ্রতা জানে, জানে অপেক্ষার করুন কলাপ
ছিন্ন মেঘে মেঘে কিছু বিষাদ কিছু মোহ বিলাপ
একছত্র দ্বন্দ-আনন্দ পথে পথে ভাবলেশহীন l
কিছু হিমফুল অনুগ্রহে সৌন্দর্য ছড়ায়
আলোক অন্বেষনে
শব্দগুলো মৌন পড়ে থাকে সৌরভহীন —
নৈঃশব্দ উচ্চারণে
ইচ্ছে আর স্মৃতি কেমন ব্যাধিহীন—-
জনম জনমের আত্মীয় একে অপরের
কি-ই বা চাইবো অস্ত দিনের কাছে
শ্রম ব্যতীত জীবনের কি মুক্তি আছে?
অস্তিত্ব ঘোষনা করে আমি আদিম সঙ্গী পৃথিবীর
দ্যাখা হয় বারংবার পুরাতন-নতুনে, হবে নিত্যদিন l
সে কোন বিষাদ বহ্নিবেলা
রোদের পরতে পরতে বিষন্ন সুশ্রী দেখি, শস্যের অঙ্কুরে প্রত্যক্ষ প্রত্যয় দেখি
আকাশ তাকিয়ে থাকে যেমন পৃথিবীর দিকে, মৌনতায় হারিয়ে যায় যেমন খন্ড মেঘ, ঘাসফুল থেকে অট্টালিকা
সায়াহ্নের পরিশ্রান্ত ছায়ায়-
ভরদিন উচ্চারিত অনুচ্চারিত –বিপুল বিস্ময় দেখি।
সেকোন দূরতম আলোগিরিপথে নিয়ে চলে বোধের বিকেলে,
সগোপনে চেতনার বাগানে তোলে প্যাস্টোরাল সুর
দিকময় হেলাখেলা সুখে-অসুখে—আরক্ত সুর্যের সীমান্তে
আবীর রঙের প্রশান্ত বিষন্নতার মুখ ।
ফিরে যেতে বলি তবুও পথ আগলে দাঁড়াও কেন পান্থ পরিযায়ী l
নিকটে অতি নিকটে উপদ্রুত বাক্যালাপ
চোখ মুদে মুঠো মুঠো ঔজ্জ্বল্যের কার্নিশে
না ফেরানো পলক আর্তিতে দাঁড়াও মরুচারী
কেন এ নিভৃতি
প্রশ্ন রাখো মর্মমূলে
বাতাসে বায়বীয় বহুস্বর
রুক্ষ দিনের ক্লান্ত প্রহরের না-শোনা উল্লেখ
দৃষ্টিতে ভাঙন লিখে আপন ভেবেছো যারে জনম জনমে দীর্ঘ আয়ুস্কাল l
রওশন হাসান, নিউইয়র্ক, উত্তর আমেরিকা l
রওশন হাসান (Roushan Hasan) l জন্ম ১৭ই জানুয়ারী l স্নাতকোত্তর : ইংরেজী সাহিত্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় l পিতা-মাতা দুজনেই জন্মসূত্রে কুষ্টিয়ার কৃতিজন l আমলাতান্ত্রিক পরিবারে জীবনের উন্মেষ ঘটেছে l
রওশন হাসানের লেখনীর বিষয়বস্তু বহুমুখী l মানুষ, সমাজ, প্রেম, দেশপ্রেম জীবন ও প্রকৃতির নানা বিষয়ে তার স্বতস্ফুর্ততা বজায় রেখে রচনা করে চলেছেন l উপমা, ইমেজারি, দৃশ্যকল্প নির্মাণ, অন্তমিলে ও গদ্য কবিতায় নিজস্বতায় কবিতার জগতে বিচরণ করছেন l বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই রওশন হাসান নিয়মিতভাবে লিখছেন l রওশন হাসান একজন সফল অনুবাদক l বহু বিখ্যাত ইংরেজী কবিতার অনুবাদে তাঁর পারদর্শীতা দেখিয়েছেন l তিনি বেশ কিছু গানের লিরিক্স লিখেও সমাদৃত হয়েছেন l নিজের লেখা লিরিক্সে নিজে ও সহশিল্পীরা কন্ঠ দিয়েছেন l নিয়মিত প্রবাসের বিভিন্ন সংবাদপত্রে কলাম, কবিতা লিখছেন l
মন, মনন, সময় ও ভাবনার স্রোতে ভেসে কবি তার সৃষ্টি তৈরী করেন l নিসর্গ,পথ, সমুদ্র সর্বোপরি মানুষকে ভালবেসেই তার কাব্য-শক্তি বিস্তৃতি লাভ করেছে l রওশনের কবিতার প্রসঙ্গ প্রেম, দেশপ্রেম, বিচ্ছেদ, গৃহকাতরতা, উদাসীনতা,অকারণ উচ্ছ্বাস, একাকীত্ব বোধ, মনস্তাত্ত্বিক সংকট, সূক্ষ্ম জীবনীশক্তি প্রভৃতি l তার গদ্য ভঙ্গির কবিতায় রয়েছে নিষ্কন্টক মসৃণতা, কবিতার নির্মাণ ও বৈচিত্রতা, যা তার কবিতাকে দিয়েছে বিশিষ্টতার যোগান l ভাবনা ও মননের রূপান্তরই কবিতা৷ সৃষ্টির ভাষা, সংস্কৃতি রক্ষার তাগিদ, প্রকৃতির প্রতি অসীম টান, সামাজিক চিত্রণের প্রতি র্দুনিবার আর্কষণ, সৃষ্টির প্রতি সজাগ দৃষ্টি ও পাঠকের প্রতি সজাগ দৃষ্টি নিবেশ বরাবরই। প্রাত্যহিক জীবনের উত্থান-পতন, বেঁচে থাকার আশ্বাস, ভালবাসা, প্রেমপ্রীতির দৃপ্ত প্রত্যয়, সৌন্দর্যের সোপান বেয়ে কবি চলমান।
বর্তমানে তিনি নিউইয়র্কে সপরিবারে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তিনি দুই পুত্র সন্তানের জননী l নিউইয়র্কের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদনার কাজের সঙ্গে সংপৃক্ত রয়েছেন । তিনি ‘দ্য একাদেমি অব আমেরিকান পোয়েটস্’, বাউয়ারি পোয়েট্রি ক্লাব ও পোয়েটস্ হাউজের সম্মানিত সদস্য l
রওশন হাসানের সাহিত্যে বিচরণ ভঙ্গিতে তার কোন বাঁধা নেই, তিনি তার স্বাধীন সত্ত্বা নিয়ে এগিয়ে চলেছেন নিজস্ব ভিত মজবুত রেখে ।
সংবেদনশীল এই কবি ভাষা ও অন্তর্মুখি ভাব বিন্যাসে তার দক্ষতা ও অনুভূতি প্রকাশ করে অগণিত পাঠকের হৃদয় জয় করছেন l বাংলা সাহিত্যে তার আসন সুপ্রতিষ্ঠিত হোক এবং তার সাহিত্যকর্মের অকৃত্রিম ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক । রওশনের সৃষ্টিশীলতা সুদূরপ্রসারী ও সর্বজনবিদিত হোক ।
সম্মাননা :
সাপ্তাহিক ঠিকানা লেখক সম্মাননা (২০২৩) নিউইয়র্ক, উত্তর আমেরিকা
নন্দিনী সাহিত্য সংগঠন সম্মাননা, ২০২৩, ঢাকা l
ড্রিম ফাউন্ডেশন লেখক সম্মাননা (২০২১) নিউইয়র্ক, উত্তর আমেরিকা
বেগম লুৎফুন্নেসা আব্বাস ভাষা ও সাহিত্য সম্মাননা (২০১৯) ঢাকা l
বাসাপ বর্ণবিন্যাস সাহিত্য সম্মাননা(২০১৭) ঢাকা l
শোটাইম মিউজিক সাহিত্য সম্মাননা (২০১৭) উত্তর আমেরিকা l
লেখকের গ্রন্থসমূহ :
স্বপ্নের অভিলাষে
নন্দিত সায়রে
মেঘ তুমি কতদূরে
অনুভবে অনুক্ষণ
সবুজ ঘাসের পৃথিবী
জলের রঙ বদলে যায়
বাতাসে দোঁহের সংকেত ভেসে আসে
অণূদিত বর্ণমালা
গন্তব্যপথ ও কিছু সঙ্গী
হৃদয় জমিনে বৈরী বসন্ত
তোমাকে প্রদক্ষিণ করি
অরণ্য অপরাহ্ন (উপন্যাস)
Over the Horizon
Wednesday mourning
প্রতিফলিত রোদ্দুর (যৌথ কাব্যগ্রন্থ) ২০১৬
স্বপ্নশিকারীর অরণ্যবিহার (যৌথ কাব্যগ্রন্থ) ২০১৬
Golden leaves (যৌথ কাব্যগ্রন্থ) ২০১৮
স্বপ্ন তরী (যৌথ কাব্যসংকলন) ঐক্যতান প্রকাশন ২০২২
সম্পাদনা : উত্তর আমেরিকার নির্বাচিত বাংলা কবিতা ২০২৩