আহ, সেই স্বপ্ন যদি ফিরে পাওয়া যেতো!
……….
শৈশব মানেই নস্টালজিয়া। স্মৃতিকাতরতা। পিছন ফিরে দেখা। গুরুজনেরা সব সময় একটি আপ্তবাক্য বলে এসেছেন: “যায় দিন ভালো। আসে দিন খারাপ।” অর্থাৎ যে দিনগুলি গিয়েছে বা যাবে, সেদিন গুলি, আগামী দিনগুলির চেয়ে ভালো হয় বা হবে। এটি তারা বলেন, অভিজ্ঞতা থেকে। যাপিত জীবন থেকে।
আমারো, আজ এসে, তা-ই মনে হয় এবং হচ্ছে যে, অতীত ভালো ছিলো, বর্তমানের চেয়ে। যদিও সামনে চলার নাম প্রগতি। থেমে থাকা নয়। নিরন্তর ছুটে চলা…
কোথায় ছুটছি আমরা? কার পিছনে? কীসের জন্য? আর কতো ছুটবো? জানি, এসব প্রশ্নের কোন নির্ধারিত বা সঠিক জবাব কারো জানা নেই। আমারো।
আমি ঘর ও দেশ ছাড়া হয়েছি প্রায় দেড়দশক। এর মধ্যে কত পরিবর্তন, পরিবর্ধন কত কিছু হয়েছে! ভাবতেই অবাক লাগে। দেখতে-দেখতে এতোটি বছর। এতোটি কাল এভাবে কেটে গেলো! প্রবাসে। পরবাসে। কোনটি তবে দেশ? ফেলে আসা জনপদ? আত্মীয়স্বজন? না-কি স্বেচ্ছায় বরণ করা এই নতুন জনম? নতুন জীবন? জানি না।
তাহলে বলতে পারেন, বেঁচে আছি কি করে? কি নিয়ে? হ্যাঁ। ছোট্ট একটি দেশ আছে এই বুকে। আর মুখে আছে মায়ের ভাষা। এই দু’টি মাত্র সম্পদ, সঙ্গে করে নিয়ে যুদ্ধ করতে-করতে বেঁচে(?) আছি এই ডায়াস্পোরা জীবনে।
এই জীবনে প্রতিবছর আসে, নববর্ষ, বৈশাখ, একুশে ফেব্রুআরি, বইমেলা, আসে রমজান, আসে ঈদ। কিন্তু শৈশবের সেই হারিয়ে যাওয়া আনন্দ কই এখানে? কোথায় পাড়ায়-পাড়ায় দল বেঁধে শবে বরাত এর চাঁদা তুলে মিলাদের আয়োজন? কোথায় শেষরাতে উঠে ঘুমন্ত পড়শিদের জাগিয়ে তোলার আমন্ত্রণ? নতুন জামা-জুতা, প্লাস্টিকের হাতঘড়ি, চশমা, ঈদের সালামী নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি? ঈদ কার্ড দেওয়া ও নেওয়ার প্রতিযোগিতা?
এসবের কিছুই নেই এখনকার ছেলেমেয়েদের জীবনে। আমরা বড় বেশি যান্ত্রিক হয়ে গেছি। আরো বেশি যান্ত্রিকতা আমাদের আরো গ্রাস করবে। হয়তো এটিই স্বাভাবিক। কালের নিয়ম।
তবু, মাঝে-মঝে অতীতে ফিরে গেলে, বিশেষ করে শৈশবে, আরো বিশেষ করে ছোটবেলার ঈদের দিনগুলিতে ফিরে গেলে, ভেসে ওঠে অনেক আনন্দ-বেদনার স্মৃতি। দলবেঁধে দোয়া পড়তে-পড়তে নতুন পাঞ্জাবি-পাজামা পড়ে পাড়ার ঈদগাহ মাঠে যাওয়া। ফিরতি পথে অন্য দিক দিয়ে ঘুরে নানা-মামা’দের বাড়ি যাওয়া, মুরুব্বিদের পা ছুঁয়ে সালাম করা, সকাল বেলা খিচুড়ি খাওয়া, নিকটাত্মীয়ের কবর জিয়ারত করা। বাড়ি ফিরে সেমাই দিয়ে মিষ্টিমুখ করা। এরপর পাড়া-প্রতিবেশিদের বাড়ি-বাড়ি যাওয়া। ইত্যাদি আজ স্বপ্নের মতো মনে হয়।
আহ, সেই স্বপ্ন যদি ফিরে পাওয়া যেতো!
….
আটলান্টা, জর্জিয়া।
নস্টালজিয়া ভালো লেগেছে
স্মৃতিময় জীবনের অনবদ্য আখ্যান।