বিষাদ ও ঈশ্বরী
…….
শব্দের ওপারে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি মানুষ, একাকি
আমি তার রুগ্ন পাঠক,খুঁটে খাই প্রণম্য ধ্বনি সকল
বিলম্বিত লয়ে জেগে ওঠে সময়ের স্বেদবিন্দু আর
চকিত সমস্ত আবহ ঘিরে জন্মান্তর হয়ে যায় ইবলিশের
ষষ্ঠেন্দ্রিয় ছিন্ন করে অনন্তের দিকে ছুটে যায় কবিজন্ম
তখন অচানক এক স্বপ্নে প্রেয়সী হয়ে ওঠে প্রিয় অক্ষরমালা
রক্তের অক্ষরে ফোটা শিল্পগুলো উষ্ণীষসদৃশ হয়ে
তন্দ্রাহীন এক আলোকবর্ষ!
মনে হয় এই তো সেদিনের উত্তরমঞ্চ,পাতা জুড়ে
মহাকবিতার লাইন
অসূয়াহীন গমনের এক পরীক্ষিত অভিজ্ঞান…
কেবল মায়াবী আলেয়ায় শ্রান্ত পথিক দিকভ্রম হলে
বিনম্র আবেশে নিমীলিত চোখের পাতায় নেমে আসে
অলর্কের বিষাদ ও ঈশ্বরী
মৃত্যু
……
এখন নীরবতা নিয়ে জেগে থাকা অক্ষগুলো গন্তব্য
তবে কী নীরবতা মৃত্যুর সজল সাক্ষী,না
বোধের ভেতরে জেগে থাকা পরমেশ্বরের গান!
যশোর রোডের মত পড়ে রয়েছে তার জীবনস্মৃতি,
সেখানে বৃক্ষের কোন আলাপন নেই বলে
সাকিনে সাকিনে লিখে রাখি বিষাদ
অথচ ভালবাসা এগিয়ে এলে মৃত্যুও কেমন
অপটু হয়ে যায়
বৈশাখ
…….
শেষের রোদটুকু একান্তে চলে যায় দিগন্তের ওপারে।
আমি তাকে ছুঁয়ে ছুটে যাই
অপর এক দ্রাঘিমা রেখার দিকে,অপলক মূহুর্ত
চিহ্নময় সবুজ বনানীর ভেতর থেকে ডাক দিয়ে যায়
ক্ষতহীন স্বপ্নেরা,নিবিড় পর্যটনে ভেসে ওঠে শুধু
বিগত বছরের ক্লান্তি,অনুজ্জ্বল পথের জলপ্রপাত
ভারহীন সময়ের আহ্লাদে যেটুকু তন্ময়তা চঞ্চল করে
আমাদের প্রজন্ম যৌবন
তার ভেতরে কোন অবগুণ্ঠন নেই!নীল আকাশের
দহনে প্রজ্জ্বলিত সকাল কেবল টোকা দিয়ে যায়
বৈশাখী যাদুঘর
অন্তহীন স্রোত ঘিরে ঘোষণা হয় ছলনাহীন সহজিয়া
কান রাখি মাটির তরলে;আদুল সে অবয়ব থেকে
অনাবশ্যক ক্ষতগুলো মুছে দিই নরম ছোঁয়ায়
বেনিয়ার দালালি থেকে সরিয়ে নিই প্রিয় শৈশব,যদি
কখনো নিভৃতে বলে ওঠে প্রাণ এসো বৈশাখ, এসো
কিংবা প্রমিত উচ্চারণে গেয়ে ওঠেন দেবব্রত বিশ্বাস
বড়দিন
…….
ইবলিশ এগিয়ে এলেন আমার দিকে, ঈশ্বরও
অথচ উষ্ণ করমর্দন হলো না কারোর সংগে!
নিকানো উঠানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম ক্ষণিক,
কলাপাতার রোদে রোদে শীতার্ত সংগীত, ব্রহ্ম
মৌনী জাতক আমি
দু’হাত তুলে ডাক দিলাম পিতাকে
সামুদ্রিক তরঙ্গের ভেতর থেকে কে যেন বলে
উঠল
আজ বড়দিন,
গর্ভে গর্ভে বেজে উঠল সানাইয়ের সুর আর
দুঃখগুলো পতিত হয়ে ফিরে গেল জনাইয়ের ক্ষেতে
ভাঙা আড়কাঠ থেকে নেমে এলো টুকরো জ্যোৎস্না,
একটা জন্মদিন ঘিরে ক্রমে মহীয়ান হয়ে গেল
গোটা মানবজীবন
অন্তর্যামী
……..
খুব কি অন্ধকার ছিল বেহুলালোকে! তবে কেন
এভাবে প্রত্যাগমন দৃশ্যহীন সাধনাব্রতে!
যাওয়া নিশ্চিত জানি তবু এই ভজনালয়ে যে মেঘেরা
প্রতিদিন পরম বিশ্বাসে দান করে ছায়া
কিংবা যে ধুলায় মিশে রয়েছে দৈনন্দিন সহজ জীবন
তার ভেতরে বেজে উঠুক পার্থিব জয়ধ্বনি
যদি কখনো ফিরে আসে আজরাইল অসময়ে
তাকে বলে দিও একটু সবুর করো প্রিয় স্বজন
সময় হলে পৌঁছে দেবো মহাকালের অক্ষরসমাচার
এখন বড়ো দুঃসময়!পাশে থেকো কথাটি বলা
খুব একটা সংগত নয় তুমি জানতে বলে
সকল একাকিত্ব আগলে রেখেছিলে নিজস্ব উঠোনে।
শুধু সামনে লতিয়ে চলা লাউগাছ তার ছোঁয়া
পেতে পারে ভেবে তোমার নিভৃত প্রস্থান!
ভোরের আলোয় সে কথা লেখার আগে অভিধাহীন
এক একটা নেকট্য ভেসে আসে চৌকাঠের ওপারে
আর তখন সকল ভালো লাগা মূহুর্তগুলো ধীরে ধীরে
লোকায়ত দৃশ্য ছাড়িয়ে ক্রমে অন্তর্যামী হয়ে যায়
শাদা পালকের গান
……..
ধান গাছের উপর দিয়ে যে রোদ এসে দাঁড়াল
তোমার দরজায়
এসো তার নাম দিই বর্নমালা,
আর সূর্যাস্ত রাঙা হলে জলের রেখায় যেভাবে
কথা বলে ওঠে রঙিন ফড়িং
তাকে সাজিয়ে দিই অক্ষরে অক্ষরে
পাখির ডাক শেষ হলে তাকে নিয়ে পশ্চিমে যাবো
পশ্চিম কি আমার অনাত্মীয় যে তাকে রেখে দেবো
গ্যালারি ফিচারে
না,বিবর্ন সংলাপের ভেতর থেকে মুছে দেবো ক্ষত!
যাতে অনাবিল জ্যোৎস্না হয়ে ভেসে যেতে পারে
রক্তাল্পতার শহর,নীল পরবাস
এসব ভাবতে ভাবতে ক্রমে নিরুদ্দেশ হয়ে যাই।
দেশান্তরের ডানায় ডানায় তখন অশ্রুপীড়িত স্বর
আর স্বরের ভেতর আবহমান শাদা পালকের গান
প্রশ্ন কিংবা বিষাদ
……..
১.
মধ্যমা ঘিরে রেখেছে পাহাড়পুরের নিবিড় আলেয়া
হাতের ভেতর মাকড়সার প্রবল প্রলোভন
তবু,বাতিঘরে কে যেন শুয়ে রয়েছে তন্দ্রাহীন
২.
কুঠার শানিয়ে রাখো দয়াময়,পৃষ্ঠা জুড়ে লেখো আয়ু
মুদ্রিত জোছনাও নিরাময়হীন
তবে কি পরশপাথর বর্ণপরিচয়ের জীবন চিনে নিল!
চিহ্নহীন পরাজয়
…….
ওই পথে আলোছায়া আছে।ও পথে যেও না
বলেছিলেন বন্ধুর বন্ধুরা
নিবিড় অরণ্য থেকে ছড়িয়ে পড়া সে পথে কেবল
মহাপুরুষেরা হাঁটেন।হাঁটেন মহাজনেরাও!
হাঁটা শেষ হলে তারা ফিরে আসেন নিজস্ব নিয়মে
আমি তো নেহাতই পথিক!দিগন্ত ছুঁয়ে বসে থাকি
সরল মধ্যাহ্নে এসে
কিংবা অতর্কিত কেউ এগিয়ে দিলে লাবণ্যহীন জ্যোৎস্নার মতো পড়ে থাকি চরাচরবিহীন!
শুধু একটা বিরতি খুঁজে নিতে গেলে
ছুটে আসা অসুখী রংগুলো অপার মুহূর্ত হয়ে যায়
আর আদল বদলে বদলে চিহ্নহীন পরাজয়গুলো
নিঃশব্দে পাড়ি দিয়ে যায় চারণক্ষেত…