ইয়াওমুল আরাফা’র ধ্বনি ক্ষমার দিকে
আরাফা’র শুভ্র স্মৃতিগুলো হৃদয় কাঁদায়
জবলে রহমত স্মৃতি জাগে ইতিহাস-বাঁকে
বাবা আদম থেকে নবী মুহাম্মাদ সা.
দিয়েছে মুক্তির ডাক বিশ্ব মানবতায়-
আজ থেকে মুক্তি পাবে আরব- অনারব
আজ থেকে মুক্তি পাবে সুদ ও ঋনের রব;
মুক্তি পাবে সমস্ত দাস-দাসী শৃংখল থেকে,
লা-শরিক আল্লাহ’রই শুধু ইবাদত হবে।
অথচ এখনও আমরা নিজেদের মুসলিম বলি
অথচ এখনও আমরা সুদ দিয়ে জীবিকা গড়ি।
অথচ এখনও আমরা গান গাই হুব্বে রাসুল
অথচ এখনও মোল্লাদের ভুড়ি জগৎ বিপুল ।
আরাফা’র আকাশ আজও আমাদের ডাকে
মুক্তির সূর্যটা বিক্ষুব্ধ আরব-আজমে হাকে।
দাসের জীবন নিয়ে কেঁদে মরে মজলুমান
লা-শারিক আল্লাহ বলা পায় জঙ্গি বাখান।
আইয়ামে তাশরিকের ধ্বনি উঠুক দিকে দিকে
ইয়াওমুল আরাফা…আরাফা… বলে ক্ষমার দিকে…
আল্লাহু আকবার…আল্লাহু আকবার…
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার ধ্বনির দিকে
১৯জুলাই’২১/ ৯ জ্বিলকদ১৪৪২
কাফকো
অপেক্ষা
বাবার পাঞ্জাবীটা যখন মাঝে মাঝে বের করে পরি,
এক মাদকতায় অতীতে ফিরে চলি,
তাঁর দেহের ঘ্রাণ লেগে আছে, চেতনা-অস্থিমজ্জায়।
ঘরে ফিরতে কখনো সখনো দেরি হলে-
অপেক্ষায় তসবীহ্ জপতেন তিনি।
অপেক্ষার কাছে হার মানতো বার্ধক্যের কষ্টও-
তখন বুঝিনি।
এখন তাঁর মোটা কমদামী জামাটা আমাকে বুঝিয়ে দেয়,
কত আরাম সুতির জামা আমাকে পরাতে,
বাবার আহ্লাদ জলাঞ্জলি হয়েছিলো পারিবারিক বাজেটে।
এখন আমি বাজেট বক্তৃতার আগেই বুঝে যাই, সম্পূরক বাজেটও।
বাবা, সত্যিই আমাকে জীবনের শৈলীমান বোঝাতেন,
এই বোকা আমি বুঝিনি কখনো তোমার যাপন অভিমান…
অপেক্ষাটা জীবনময় হয়ে রয়ে গেলো শুধু।।
১৯জুন’২১
কাফকো।চট্টগ্রাম।
শীতকুয়াশা
অনেক দিন বাবার পানজাবীটা পরা হয় না,
যখন মনখারাপের দিনগুলো আসে এবং
যখন কাউকে আর নিজের ভেতরটা উগলে দিতে পারি না,
তখন বাবার পানজাবীটা পরে অন্ধকার বারান্দায় চুপটি করে বসে থাকি।
ইজি চেয়ারের দুলনিটা বাড়ার সাথে হৃদয়টাও দুলতে দুলতে ক্লান্ত হয়…
আজকাল আর বারান্দায়ও বসা হয় না,
শীতের সাথে সাথে মশকসংগীত প্লুত করে বিশ্রী ভাবে;
অগত্য দরোজা বন্ধ হতে থাকে।
এভাবে দরোজার পর দরোজা বন্ধ হতে হতে শিটিয়ে থাকি কাঁথার আড়ালে।
নিদ্রার দেবী এসে বিভ্রমের নৃত্যাসরে নিয়ে চলে।
মন খারাপের বেদনাকে শিল্পের আড়ালে রেখে কত জীবন লীন হতে দেখি কারুভাষ্যে।
যখন জেগে উঠি একরাশ তৃষা এসে জড়ায় যাপন কবিতায়।
বাবার পানজাবীটা বুকে চেপে ভেতরের আমিটা তখন হুহু করে কাঁদে,
অথচ আলস্যের শিল্পী হিসেবে ঘরণীর অভিযোগ রাষ্ট্র হয়,
অথচ বারান্দা বাগানও শীতকুয়াশায় কুঁকড়ে যায় রোদ-জল অভাবে
রোদ আর জলের তরে জীবন ও কবিতা শিল্পোত্তীর্ণ বেদনা অপার হয়ে রয়…
২৯ নভেম্বর ২০২১
কাফকো, চট্টগ্রাম।
দ্বিতীয় জন্মের স্মৃতি
দ্বিতীয় জন্মের স্মৃতি হাতড়াতে হাতড়াতে মায়ের শিথানে যাই।
সেখানে পরে আছে তসবির দানা, সুরমা ও রেহালে কোরআন-
যেখানে ভাঁজের আড়ে দেখে আছে হদ্ দেয়া কাগুজে নিশান।
তিনটে কন্যার পর ছমিউল বেগমের অমন মুখ আর কত স’য়!
দিনের পর দিন মা’দের কাটেতো সময় পড়ে পড়ে সুরা আনয়াম।
অথচ কন্যারা দিব্যি এখন সমাজের মুখ ও মুখ্য হয়ে জ্বলজ্বলে ওম,
প্রদীপ জ্বালানো দা’য় হোসনে আরা চৌধুরী গর্ভে নিয়ে পড়তেই থাকেন
অনবরত সুরা আনয়াম, কলমা-কালাম, নিয়ে অন্ধ-সমাজ অভিমান।
শ্বাশুড়ি মুখ উজ্বল থেকে উজ্বল, অথচ নেই শ্বশুরের ভিটেতে পিদিম।
পিতা লাজুক মুখে মিলিয়ে পড়েন সুরা আর-রহমান যেনো শুভ্র-শুভ্রম
সেখানে শেয়াল ডাকে- হুক্কাহুয়া সুরে, কে কখন জমাবে বংশের খেল্?
অকৃতজ্ঞ রক্তের বন্ধন- সা রে গা মা গায়, দোল দেয় লাগ ভেল্কি ভেল্।
০৬.০৩.২০২২
কাফকো, চট্টগ্রাম।
আড়াই পাতার ভাঁজে
মৈরাং রমণীর রূপের খাঁজে হারিয়েছে জাফলং দুপুর,
আড়াই পাতার আড়ালে লুকায় গাঢ়সবুজের মেহফিল ;
কে লিখবে অমন আত্মহারা ক্ষণে বৈভব স্রষ্টা ও সৃষ্টির
মাচাঙে শুকায় যখন শুটকি-নাপ্পি ঝাঁঝানো বিকেল।
টমটমের মাঝি নির্বিকার হাসে অমন রৌদ্রস্নান যাত্রায়,
খাসিয়া শিশুরা তখন পর্যটক দেখে হাই ফাইভ শিখায়।
তাঁতি পাড়ার শাড়ির বুননে বাড়ে কিশোরীর স্বপন
রঙ বৈচিত্র্য ও কারুতে মন হারায় আরবান রমণী;
শিশুরা হারায় বিশদ বাঙলা তুমি রূপে মা জননী!
পুরুষ মন খোঁজে ভাঁজের গরিমা দীপ্তিময় স্নান।
কতিপয় শুয়োর হাসে মাচাঙ তলে মুদ্রা কিসিমে
মানচিত্রে মাঝে পাথর গরিমায় আরও কেউ হাসে।
সদ্য প্রৌঢ় এক কৃষাণ- রমণতৃপ্তির স্মৃতি হৃদয়ে বুনে
অবসাদ তাড়ানো এককাপ জাফলং চা’য় মুগ্ধ দৃষ্টিতে;
গীর্জায় বাজতেই থাকে নির্লিপ্ত কৃৎ-কৌশলী ঘন্টা।
১৮.১২.২০২১
জাফলং, সিলেট।