spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাদীর্ঘ কবিতা : অভিবাসীর গান

লিখেছেন : আমিনুল ইসলাম

দীর্ঘ কবিতা : অভিবাসীর গান

আমিনুল ইসলাম

হে জননী, বিষুবরেখায় হেলান দিয়ে দুচোখ মেলে দ্যাখো–
নদীর মতো বয়ে চলেছি আমি
কাঁধে নিয়ে নিরন্তর কর্মপ্রবাহের জল
আমার সাথে আছো তুমিও
যতদূর গঙ্গা, ততোদূর গঙ্গাঋদ্ধি
যতদূর উড়ি আমি, ততোদূর বিস্তৃত হও তুমিও।
আলেকজান্ডার যা পারেনি
যা পারেনি সুলতান সুলেমান
কিংবা রানি ভিক্টোরিয়া,
আমি তাই করে চলেছি
এখন কোনো মহাদেশেই আর অনুপস্থিত নও তুমি।
আর দ্যাখো, তোমার মুখের জবানকে
হাওয়ার মতো ছড়িয়ে দিয়েছি আমি
পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত!
কান পাতো মেরু হাওয়ায়– উত্তরে, দক্ষিণে
কান পাতো আটলান্টিকে–
ঢেউয়ের গর্জনে, ঈগলের শিসে,
শুনতে পাবে আপন কন্ঠস্বর;
আমি যেন সোলেমানি তখ্ত–
তুমি সওয়ারী,
যতদূর অভিবাসন, ততোদূর মাতৃভাষা
যতদূর মাতৃভাষা, ততোদূর মাতৃভূমি।

স্বপ্নশাসিত শিশুকালেও ভাবিনি স্বপ্নের সীমা
এতটা সম্প্রসারিত হয়;
শিশুকাল বাল্যকাল, কিংবা কৈশোর
কোনোকালেই ভাবিনি
এতদূরে আসবো কখনো,
কোনোদিন এতকাজ করতে হবে আমাকে।
আমার যেনবা কোনো ক্লান্তি নাই, শ্রান্তি নাই
বিশ্রাম নামক শব্দটি লেখা হয়নি
পরিযায়ী প্রাণের সিলেবাসে আমার।
কিন্তু কোথা থেকে আসে এত শক্তি!
কোথা থেকে আসে এত প্রেরণা!
সেটা ভেবে দেখার বিষয়
ভেবে দেখার সময়টুকু ওভারটাইম
ভেবে দেখার সময়টুকু ভয়!
তো ভেবে দেখবো সে কখন!
কাজই আমার পেশা- কাজই আমার নেশা ।

অথচ মাঝে মাঝে কিছু অকৃতজ্ঞ কণ্ঠ
মাঝে মাঝে কিছু আবোল তাবোল
কিন্তু এটাই সত্য যে অভিবাসী কর্মীর
প্রতিটি ঘামের ফোঁটা পড়ার সাথে
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে
একটি করে ডলার পড়ার শব্দ হয়
তৃপ্তির চিত্রকল্প হয়ে হেসে ওঠে গর্ভনর মহোদয়ের চোখ।
ঘর্মাক্ত দেহে জেগে ওঠে প্রেরণা
জেগে উঠি আমি।
অভিবাসীর রক্ত পানি হয়ে পড়ে প্রবাসের মাটিতে
স্বদেশে জমে ওঠে জ্বালানির জোগান
অর্থনীতির চাকা ঘোরে
গতি বাড়ে বিমানের ইঞ্জিনের
ইউনিফর্মের রেশনে জমা হয় শায়েস্তা খানের কাল
পুরাতন পতাকায় নতুন হাওয়া লাগে;
এসবই আমাকে ক্লান্তির বদলে আনন্দ দেয়
সার্ভিসিং হয় জীবনের; বেঁচে উঠি পুনর্বার।

হে জননী, সবাই বলে দাও, দাও, আরো দাও, আরও!
আমি তো দেওয়ার জন্যই অভিবাসী হয়েছি মা গো,
দিনরাত দিয়েই চলেছি
প্রবাসে দিচ্ছি, স্বদেশেও পাঠাচ্ছি
দেওয়া ছাড়া আর কীইবা আছে করার!

দূর হতে আরেকবার নিবিড়চোখে চেয়ে দ্যাখো
আমি আনন্দের রাজ্যে অভিবাসী
আমি বেদনার রাজ্যে অভিবাসী
আমি অনুরাগের উঠোনে অভিবাসী
আমি অভিমানের ভূগোলে অভিবাসী
আমার হাসি পায় না সহগামী ঠোঁট
আমার কান্না পায় না প্রিয়তম দৃষ্টি
আমার আবেগ পায় না সংবেদনশীল বুক
যেখানেই আমি, সেখানেই কাজ
যেখানেই কাজ, সেখানেই আমি
সবার জন্য যখন বিশ্রাম, আমার তখন ওভারটাইম
সবার জন্য যখন মিলন, আমার তখন নৈঃসঙ্গ
সবার জন্য যখন উৎসব,
তখন আমাকে জড়িয়ে অনিঃশেষ উৎসবহীনতা।

ড্রাইভিং-শেষে গাড়িচালক মোছে তার গাড়িটি
রাইডিং শেষে ঘোড়ার গায়ে হাত বোলায় ঘোড়সওয়ার
ঘাটে পৌঁছেই নৌকার পাল গোটায় নৌকার মাঝি
কিন্তু আমার কোনো অন্তবর্তী গন্তব্য নেই
আমার জন্য নেই কোনো ক্লান্তি মোছার হাত।
অধিকন্তু সকলেই নয়, দু-একজন মালিকের কথা ভাবলে,
তালগোল পাকায় ভাবনা
জানি না– সবখানি উজাড় করে নিয়েও
কেন মন ভরে না সেইসব মালিকের,
কেন তারা মাঝে মাঝে দাসযুগ ফিরিয়ে আনেন!
তখন আমাকে দেখে–
জাতিসংঘের ওয়ালে হেলান দিয়ে নীরবে কাঁদে
আইএলও কনভেনশন
বোবার মতো গোঙায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের ঘোষণা।

আর কষ্টের মাঝেও হাসি চেপে রাখতে পারি না
যখনই দেখি–
কতিপয় লোক ট্রাম্প-কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠছে
অভিবাসন বিরোধিতায় আর
তাদের গা থেকে ছড়িয়ে পড়া গন্ধে
প্রকটিত হয়ে উঠছে অস্ত্রহাতে অভিবাসনের ইতিহাস।
হে জননী, বলতে পারো মানুষ এত স্ববিরোধী কেন?
কেন তারা অস্বীকার করতে চায়
নিজেদেরই রচা ইতিহাস ও ঐতিহ্য?
আমি তো কোনও জবরদখলকারী নই
আমার সাথে নেই কোনো উপনিবেশবাদী জাহাজ
কিংবা সাম্রাজ্যবাদী সাবমেরিন;
আদিমানুষের কোনো জনপদ নতুন করে আবিষ্কারের
হাস্যকর দাবিও নেই আমার মনে;
আমি শুধু স্বল্প দামের শ্রমিক মাত্র
যাা নিই, দিই তারচেয়ে অনেক বেশি
তবু কেন এই অদ্ভুত বিরোধিতা?

আমার কুঁড়েঘরে কোনো বোমা পড়েনি বটে
কিন্তু যাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করেছে
টমাহক আর কার্পেট বোমা,
এবং অত্যন্ত অন্যায্যভাবে,
শুধু ধর্মীয় পার্থক্যের কারণে যারা টেক্সটবুক
একজাম্পল অব ইথনিক ক্লিনজিংয়ের শিকার,
তারা কেন নিরীহ প্রাণটা হাতে নিয়ে
যেতে পারবে না পৃথিবীর আনাচে কানাচে?
ভিটায় গর্জনশীল বোমা, সীমান্তে তাক করা রাইফেল,
এহেন পরিস্থিতি তৈরী করছে কারা?
অভিবাসীরা কেন গ্লোবাল বিশ্বের নন্দঘোষ হবে!
বিশ্বায়নের মঞ্চে প্রবাদের কণ্ঠের মতো সোচ্চার আলোকায়ন
তার বিউটি পার্লার মুখে কালি লাগা দেখে
আমার তো ভীষণ কষ্টই হয়, প্রভুগণের হয় না কেন ?

দাখো, অভিবাসন প্রকৃতিরই ধর্ম
সাইবেরিয়ার হংস-মিথুন এসে ডুডুল-লু
গান গেয়ে যায় তোমার উঠোনে
তুমি তালি দিয়ে উঠো-ওয়ান মোর! ওয়ান মোর!
জলের একতারা হাতে নদীরা চিরদিনই অভিবাসী
আর কান পেতে মুগ্ধ দুপাশের সবুজ ভূগোল;
দক্ষিণ সমুদ্রের স্নানসিক্ত হাওয়া অভিবাসী হয়ে আসে
তোমার চত্বরে আর ফুলে ও ফসলে
ভরে ওঠে তোমার উঠোন;
চন্দ্র সূর্য তারা অভিবাসী প্রাণে বিলিয়ে চলেছে আলো
আর পৃথিবী ভরে উঠছে প্রাণে ও প্রাচুর্যে, স্বপ্নে ও সম্পদে
কখনো এপাশে, কখনো ওপাশে;
মানুষও মূলে অভিবাসী,
নিষিদ্ধ ফলের স্বাদ নিয়ে সেই যে এলো স্বর্গের সিঁড়ি বেয়ে,
ফেরার বাসনা আদি বাগানের গন্ধ হয়ে
জড়িয়ে রেখেছে তার পরিযায়ী মন
L’Oreal কারখানায় তৈরি ইহলৌকিক পারফিউম
যা মুছে ফেলতে পারে নাকো সবখানি,
পারে নাকো নাস্তিকতার সেন্টের শিশিও।

যাক ওসব, আমি আদার বেপারী, অত বড় বড়
জাহাজের খবর হজম করতেও পারব না;
আমার কাজ পেলেই হয়,
কাজ আমাকে মারে না
কাজ না পেলেই যমের ভয় এসে তাড়া করতে বসে
গর্ভবতী রমণীর মতো কাজের মজুদ নিয়ে বুকে
আমি ক্লান্তিকে শক্তিতে পরিণত করি
আমি অশ্রুকে শুকাই আনন্দের বাতাসে
আমি বেদনাকে অভিবাদন জানিয়ে রাখি
আমি জানি এসবের অবসান রচিত হচ্ছে দূরে
যেখানে আমি রেখে এসেছি আমার সোনালি আমানত
হে জননী, তুমি আমার সব আমানত সামলে রেখো
আমার সন্তানের জন্য রেখে আসা চুমুটা
রোজ ওর কোমল অধরে দিও সকালে ও সন্ধায়;
যে প্রিয়জনকে রেখে এসেছি
জলেভেজা শপথের সান্ত¦নায়, তাকে যেন
লুট করে না নিয়ে যায় মতলববাজ মৌসুমী হাওয়া।

সেই কবেই তো জমিদারি প্রথা গেছে
কানু সর্দারের ডাকাতির রাত এখন পুরাঘটিত অতীত
কেন তবুও প্রবাসীর রিজার্ভ রাতে ডাকাতের ভয়
কেন তবু তার অর্জিত রোদে চাঁদাবাজির উৎসব?

আরেকটি কথা, আমি কোনোভাবে দাঁড়িয়েছি ফের
কিন্তু তুমি কি জানো জননী,
প্রবাসীগামীর খরচের খাত কত কিসিমের,
আর কত রকমের শুভঙ্কর বসে আছে–
চৌরাস্তার মোড়ে,
ছদ্মবেশি আড়ালে,
পরাক্রান্ত টেবিলে?
সবিনয় অনুরোধ, আমার মতো আর কাউকে যেন
অস্বীকৃত খরচের খপ্পরে পড়ে
ঋণের বোঝা বাড়িয়ে নিতে না হয়!
আর তোমার সকল ভুল ছিদ্রে তালা লাগাও জননী,
অতিব্যয় আর ভুলপথ সর্বনাশের মূল কারণ।

জানি, ফিরে গিয়ে আমি আর ফিরে পাবো না
আমার কৈশোর আকাশের কাশফুল দিগন্ত
যৌবন নদীর বেশকটি ঢেউ
হাতছাড়া হয়ে যাবে চিরতরে
আমি গিয়ে ফিরে পাবো নাকো অতিক্রান্ত
মিলনের অগণিত রাত।
রেখে আসা শিশুর ঠোঁট থেকে ছিটকে পড়া হাসি
ফিরে পাবো না চৈতীচাঁদের আলো নিঙড়েও।

সেসব দুঃখ সয়ে নিবো আমি, সেসব সয়ে যাবে আমার
যদি প্রত্যাবৃত্ত চোখে দেখতে পাই–
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের সাথে পাল্লা দিয়ে
চারপাশে গড়ে উঠেছে সমৃদ্ধির উঠোন
আর সেই উঠোনের এককোণে
আমার জন্য প্রতীক্ষারত– আধখানা সচ্ছল জীবন, অন্তরঙ্গ দুটি হাত।

——-০০০———–

আরও পড়তে পারেন

3 COMMENTS

  1. [কিন্তু এটাই সত্য যে অভিবাসী কর্মীর
    প্রতিটি ঘামের ফোঁটা পড়ার সাথে
    কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে
    একটি করে ডলার পড়ার শব্দ হয়
    তৃপ্তির চিত্রকল্প হয়ে হেসে ওঠে গর্ভনর মহোদয়ের চোখ।]

    সুবৃহৎ কবিতা, সুবিশাল তার বিষয়বস্তু । এমন বিদগ্ধ দৃষ্টি দিয়ে প্রবাসীদের নিত্যতা অবলোকন করেছেন কবি যা পাঠক হিসেবে আমাকে উদ্বেলিত করেছে ব্যাপকভাবে । দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে দেশ ছেড়ে সুদূরে অমানবিক পরিশ্রম করেন আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধারা । তাদের সেই অক্লান্ত পরিশ্রম কী যথার্থ ভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন সুন্দর এই কবিতাটি তে । কবিতাটি সম্পূর্ণ বুঝতে ও এর ভেতরে ঢুকতে তিনবার পড়লাম, এতটুকুও একঘেয়ে মনে হয় নি বরং ভালো লাগাটা বাড়ন্ত থেকেছে প্রতিবারই । কবিতাটি পড়ে বারবার মনের কোণে ভেসে উঠছিল শ্রমজীবী -কৃষকদের নিয়ে লেখা কাজী নজরুল ইসলামের “জীবন বন্দনা” কবিতাটির কথা । আমি বিশ্বাস করি কবি আমিনুল ইসলাম তাঁর যোগ্যতার প্রাপ্যতা তথা রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পাবেন খুব অচিরেই । যদিও পুরস্কার প্রাপ্তি কোন কবির চূড়ান্ত গন্তব্য নয়,তবে আমিনুল ইসলাম যে প্রয়াসে কবিতা লিখেন তাঁর প্রায় ষোল কলাই পূর্ণ হয়েছে বলে আমি মনে করি । পরিশেষে কবির সাথে গলা মিলিয়ে বলতে চাই —

    [সেসব দুঃখ সয়ে নিবো আমি, সেসব সয়ে যাবে আমার
    যদি প্রত্যাবৃত্ত চোখে দেখতে পাই–
    কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের সাথে পাল্লা দিয়ে
    চারপাশে গড়ে উঠেছে সমৃদ্ধির উঠোন
    আর সেই উঠোনের এককোণে
    আমার জন্য প্রতীক্ষারত– আধখানা সচ্ছল জীবন, অন্তরঙ্গ দুটি হাত।]

  2. আমিনুল ইসলামের দীর্ঘ কবিতাটির প্রকরণ ও মানস ছুঁয়ে যায়। চিত্রকল্প হচ্ছে কবিতার অগ্রাধিকার বিষয়। চিত্রকল্প ও অলংকার নির্মাণে কবি নতুনত্বের স্বাদ দিতে সার্থক হয়েছেন বলে মনে করি। চিত্রকল্পনির্মাণে কবি ভূগোল, ইতিহাসের বিভিন্ন পাঠ গ্রহণ করেছেন। ‘’যতদূর গঙ্গা, ততোদূর গঙ্গাগন্ধি/যতদূর উড়ি আমি, ততদূর বিস্তৃত হও তুমি’’ বলে কবি আন্তর্জাতিক হয়েছেন। কবিতায় মুক্তবাজার অর্থনীতির ব্যাপ্পক প্রভাব হয়েছে। বিশ্বসাহিত্যে বিভিন্ন আন্দোলনে দ্রুত বাঁক না নিলেও মুক্তবাজার অর্থনীতি বিশ্বকবিতা (শিল্প-সাহিত্যের অন্যান্য শাখাসহ) অনেক পরিবর্তন হয়েছে, কবিতায় বাঁক নিয়েছে, কবিতার দেহে বর্ণিলতা রাঙিয়ে ঋদ্ধ হয়েছে। এ ধারা চলমান। ‘’অভিবাসীর রক্ত পানি হয়ে পড়ে প্রবাসের মাটিতে/স্বদেশে জমে ওঠে জ্বালানির জোগান’’ সাহসী উচ্চারণ যা আমরা বলে থাকি কিন্তু খুব কম কবিই বলেছেন কবিতায়। প্রবাসীর ঘামে আমাদের বিলাসিতা বাড়ে। দীর্ঘকবিতার অনেকস্থানে কবি নস্টালজিয়ায় ভুগেছেন। এই নস্টালজিক হওয়া আধুনিক কবিতার নান্দনিক এক প্রবণতা। বিলাসী না হয়ে অর্থ, সময়, ইতিহাস, সভ্যতার যথার্থতা বুঝতে পারা অধিকতর জরুরি। কবিতার এ মূলসুর আধুনিক সমাজ-রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলকর। বিভিন্ন প্রতীকী ব্যবহার কবিতার গভীরতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। একইসঙ্গে বক্তব্যের স্পষ্টতা ও পাঠকের হৃদয়ে অভিঘাত সৃষ্টি করার প্রভাবকে বিস্তৃত করেছে। কবির উপলব্ধি, কবির দেশপ্রেমের প্রকাশ চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছেন এভাবে–
    ‘’যতদূর অভিবাসন, ততোদূর মাতৃভাষা
    যতদূর মাতৃভাষা, ততোদূর মাতৃভূমি।‘’

  3. মাইকেল মধুসূদন দত্তের “কপোতাক্ষ নদ” কবিতায় কবি সুদূর বিলেতে বসে তাঁর বাড়ির পাশে বহমান কপোতাক্ষ নদে শৈশব ও কৈশোরে অবগাহিত জলকে মাতৃদুগ্ধসম তুলনা করেছেন -যা তার মন ও শরীরকে পুষ্ট করেছে। ঠিক তেমনি কবি আমিনুল ইসলাম স্যারের সৃষ্ট এ কবিতাখানি আমার হৃদয় কে করেছে পরিতৃপ্ত, করেছে আলোড়িত, আলোকিত ও দৃষ্টি কে করেছে প্রসারিত। কবিতার পরতে পরতে শব্দ, শব্দমালায় যেন প্রাসাদের এক একটি কারুকাজ। কবি নজরুল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ যেভাবে বাংলাভাষা কে বিশ্বময় ও উচ্চাসনে নিয়ে গেছেন; সে বাংলা ভাষার কত গভীরতা,অভিব্যক্তিময়তা,প্রেমময়,হ্নদয় ছোঁয়ানোর সক্ষমতা , আঁচলে বাঁধা সঞ্চিত ভালোবাসার নির্যাস এ কবিতায় আমি পেয়েছি। আরও পেয়েছি কলুরবলদের মত খেঁটে খাওয়া ,ক্ষয়ে যাওয়া জীবন, সকলের মুখে হাসি ফোটানোর মানবযন্ত্র নামক যোদ্ধার ‘না বলা কথা ‘ লুকিয়ে রাখা চোখের জল, প্রসূতি মায়ের প্রসূত সন্তানের মত উদাগ্র দেশপ্রেম। কবিতায় আরও দেখেছি অকৃতজ্ঞ মানুষ -তারা দেখেও দেখে না,শোনেও শোনে না।
    “যা নিই,দিই তার চেয়ে অনেক বেশি”
    “কেন মন ভরে না সেইসব মালিকের,”
    কবিতায় আরো দেখেছি মুখোশধারীদের রক্তভোজ।আর দাস যুগের আধুনিকায়ন শোষণের ডিজিটালাইজেশন।
    আবার ফিরে দেখেছি সেই কৃতজ্ঞ মানুষের – যারা হাত বুলায় না নিজেকে।তারা লালন করে আগামীকে,আগলিয়ে রাখে যতনে।যাদের কাজ ই জীবন, কাজই তার অবলম্বন ভালোবাসার, আশার, স্বপ্নপূরণের, মরীচিকার হাতছানিতে পথচলার,চরম প্রতিক্ষিত শেষ হাসি নিজ আঙ্গিনায় হাসার।

    ধন্যবাদ কবি। ধন্যবাদ আপনাকে।
    শব্দ ও বাক্যের ব্যঞ্জনময় ব্যঞ্জনায় পরিতৃপ্ত হ্নদয়ে জানাই আমার সশ্রদ্ধ সালাম।
    ধন্যবাদ সৃষ্টিসুখের উল্লাসে উল্লসিত পরিতৃপ্ত কবি আমিনুল ইসলাম স্যারকে।পাঠককূল মানবিক চেতনায় সিক্ত হবে নিঃসন্দেহে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

এ্যাডঃমনিরুল ইসলাম মনু on গুচ্ছ কবিতা : বেনজীন খান
পথিক মোস্তফা on সাক্ষাৎকার : নয়ন আহমেদ
সৈয়দ আহমদ শামীম on বাংলা বসন্ত : তাজ ইসলাম
Jhuma chatterjee ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি on গোলাপ গোলাপ
তাজ ইসলাম on রক্তাক্ত স্বদেশ
আবু বকর সিদ্দিক on আত্মজীবনীর চেয়ে বেশি কিছু
ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি। on জন্মদিনের কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
দিশারী মুখোপাধ্যায় on গুচ্ছ কবিতা : গোলাম রসুল
দিশারী মুখোপাধ্যায় on নির্বাচিত ১০ কবিতা : কামরুজ্জামান
তাজ ইসলাম on Menifesto of the Inevitable Revolution
কাজী জহিরুল ইসলাম on দীর্ঘ কবিতা : তাজ ইসলাম
দীপশিখা পোদ্দার on গুচ্ছ কবিতা : কাজল সেন
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on গুচ্ছ কবিতা : তাজ ইসলাম
নয়ন আহমেদ on রবীন্দ্রনাথ
নয়ন আহমেদ on কিবরিয়া স্যার
বায়েজিদ চাষা on গুচ্ছ কবিতা : অরুণ পাঠক
আবু আফজাল সালেহ on দীর্ঘ কবিতা : অভিবাসীর গান
কাজী জহিরুল ইসলাম on রবীন্দ্রনাথ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on গুচ্ছ কবিতা : হাফিজ রশিদ খান
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
নয়ন আহমেদ on আমার সময়
মোঃবজলুর রহমান বিশ্বাস on গুচ্ছ কবিতা : দিলরুবা নীলা
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
কাজী জহিরুল ইসলাম on অক্ষয় কীর্তি
Quazi Islam on শুরুর কথা
আবু হেনা আবদুল আউয়াল, কবি ও লেখক। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, নওগাঁ সরকারি কলেজ নওগাঁ। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
নয়ন আহমেদ on ফেলে আসা ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
পথিক মোস্তফা on ঈদ স্মৃতি
Sarida khatun on ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদ স্মৃতি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on দীর্ঘ কবিতা : আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
পথিক মোস্তফা on শৈশবের ঈদ : একটি স্মৃতি
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on আমার ঈদ
নয়ন আহমেদ on ঈদের আনন্দ
শাদমান শাহিদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
নয়ন আহমেদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on সাম্প্রতিক কবিতা : নয়ন আহমেদ
মুস্তফা জুয়েল on আমি আর আমার গাযালি
কাজী জহিরুল ইসলাম on গুচ্ছ কবিতা : মুর্শিদ-উল-আলম
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on অপদার্থবিদ্যা
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on দেশপ্রেমের ১০ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on নির্বাচিত ২৫ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on প্রিয়াংকা
প্রত্যয় হামিদ on শাহীন খন্দকার এর কবিতা
মহিবুর রহিম on প্রেম ও প্যারিস
খসরু পারভেজ on কাব্যজীবনকথা
মোঃ শামসুল হক (এস,এইচ,নীর) on সুমন সৈকত এর কবিতা
এম. আবু বকর সিদ্দিক on রেদওয়ানুল হক এর কবিতা